লালবাগের কেল্লা
ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ। মুঘল সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ কর্তৃক এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে, যিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র এবং পরবর্তীতে নিজেও সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
লালবাগের কেল্লার তিনটি প্রধান স্থাপনা, একটি হল পরী বিবির সমাধি।
শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ত্যাগ করার পর এর জনপ্রিয়তা হারায়।
ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল; এটিই ছিল প্রধান কারণ।
রাজকীয় মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি
পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। ১৮৪৪ সালে এলাকাটি "আওরঙ্গবাদ" নাম বদলে "লালবাগ" নাম করন করা হয়। এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গ হিসেবে।
দুর্গটি তিনটি ভবন স্থাপনার সমন্বয় ( মসজিদ, পরী বিবির সমাধি ও দেওয়ান-ই-আম )সাথে দুটি বিশাল তোরণ ও আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত মজবুত দুর্গ প্রাচীর
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক উৎখননে অন্যান্য অবকাঠামোর অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
বুরুজ গুলোর ছিল একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ। পূর্বে দেওয়ান-ই-আম ও হাম্মাম খানা, পশ্চিমে মসজিদটি
এবং পরী বিবির সমাধি দুটোর মাঝখানে এক লাইনে অবস্থিত, নির্দিষ্ট ব্যবধানে কয়েকটি ফোয়ারা সহ একটি পানির নালা তিনটি ভবনকে পূর্ব থেকে
পশ্চিমে ও উত্তর থেকে দক্ষিণে সংযুক্ত করেছে। দেওয়ান-ই-আম
হাম্মাম খানা মূলত সুবেদারদের বাস ভবন হিসেবে ব্যবহার হত । লালবাগ কেল্লার এই দালান কে দুটি কাজে ব্যবহার করা হত এক. হাম্মাম খানা বা বাস ভবন )
২. দি ওয়ানে আমি বা বিচারালয় হিসেবে)। এই দালানের নিচ তালা ছিল বাস ভবন তথা হাম্মাম খানা আর উপরের তলা ছিল কোর্ট তথা দি ওয়ানে আম।
শায়েস্তা খাঁ এই ভবনে বাস করতেন এবং এটাই ছিল তার কোর্ট। এখান থেকে তিনি সমস্ত বিচার কার্য পরিচালনা করতেন ।
লালবাগ কেল্লার তিনটি স্থাপনার মধ্যে অন্যতম পরী বিবির সমাধি। এখানে পরী বিবি সমাহিত আছেন। শায়েস্তা খান তার কন্যার স্মরণে এই মনমুগ্ধকর
মাজারটি নির্মাণ করেন।
লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে বর্তমানে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত মাত্র একটি দরজা। এই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর
সোজা চোখে পড়ে পরী বিবির সমাধি।
আসলে "লালবাগ কেল্লা" বলতে যেই ছবিটি বেশি পরিচিত সেটি মূলত পরী বিবির সমাধির
পরী বিবির মাজারের স্থাপনাটি চতুষ্কোণ। মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রং এর ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ
অলংকৃত করা হয়েছে।
মাঝের একটি ঘরে পরী বিবির সমাধিস্থল এবং এই ঘরটি ঘিরে আটটি ঘর আছে। স্থাপনাটির ছাদ করবেল পদ্ধতিতে কষ্টি পাথরে তৈরি
এবং চারকোণে চারটি অষ্টকোণ মিনার ও মাঝে একটি অষ্টকোণ গম্বুজ আছে।
শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবি, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মুহাম্মদ আজমের সাথে ১৬৬৮ সালের ৩ মে পরী বিবির বিয়ে হয়।
পরী বিবির মাজারের স্থাপনাটি চতুষ্কোণ। ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির এই সমাধিটি ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে নির্মিত।
শাহজাদা আজম বাংলার সুবাদার থাকাকালীন এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন ১৬৭৮-৭৯ খ্রিষ্টাব্দে।
(১৯.১৯ মি: × ৯.৮৪ মি) নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি এদেশের প্রচলিত মুঘল মসজিদের একটি আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানেও মসজিদটি
মুসল্লিদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে
এখানে দেওয়ান-ই-আমের পূর্বদিকে একটি বর্গাকৃতির পানির ট্যাংক / পুকুর রয়েছে। যার দৈঘ্য প্রতি পাশে ৪৫ মি) । সেখানে পানির ট্যাংক / পুকুর নামার জন্য চার কোণার সিঁড়ি আছে।
লোক মুখে শোনা যায়, কেল্লাতে সুরঙ্গ পথ ও আছে যে আগে নাকি সুরঙ্গ পথগুলোতে যাওয়া যেতো, তবে এখন আর যাওয়া যায়না। উল্লেখ্য সুরঙ্গ পথ এ যাওয়ার কথাটি নিতান্তই শোনা কথা,
এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। লালবাগ কেল্লায় সর্বসাধারণের দেখার জন্যে একটি জাদুঘর রয়েছে, যা পূর্বে নবাব শায়েস্তা খাঁ এর বাসভবন ছিল।
জাদুঘরটিতে বর্তমানে মুজিব কর্নার নামে পত্নতাত্তিক বই, ফোল্ডার, কার্ড, মানচিত্র বিক্রয় করা হয়।
লালবাগ কেল্লার দরজার ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জনপ্রতি টিকেট এর দাম ২০ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা।
যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য ২শত টাকা করে।
লালবাগ কেল্লার এদিক-ওদিক বেশ কয়েকটি ফোয়ারা দেখা যায়, রয়েছে নানান রঙের ফুলের বাগান। ঢাকায় ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে পছন্দের স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম লালবাগ কেল্লা।
এটি দেশের অমূল্য সম্পদ। প্রতিদিন শত শত দেশি ভ্রমণপ্রেমীর পাশাপাশি -বিদেশি দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর থাকে লালবাগ এলাকার এই দুর্গ। বাংলাদেশে এটাই মুঘল আমলের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন।
শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ও দরবার হল বর্তমানে লালবাগ কেল্লা জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
বর্তমানে এটি সাধারন মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন অনেক দেশি বিদেশি পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন।
Thank you so much for watching this video. Please don't forget to Like, give your feedback and share it with your friends and family.
Disclaimer :- This Channel does not promote any illegal content, Does not encourage any kind of illegal activities.
All contents provided by this channel is meant for travel purpose only.
===================================================