সাবদি ফুলের বাগান-নারায়নগঞ্জ
সারি সারি ফুলের গাছ। লাল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুল এবং সবুজ পাতায় মোড়ানো ফুলের অজস্রগাছ। হাওয়ায় ভেসে আসা ফুলের গন্ধ মন মাতায়, প্রাণ জুড়ায়। ফুলের গন্ধে ঘুম কেড়ে নেয়ার মতোই একটি গ্রাম সাবদি। যেদিকে দু’চোখ যায় কেবল ফুল আর ফুল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই চোখ জুড়িয়ে আসতে চায়। ফুলের সুবাস যেন মন ভরিয়ে দেয়।
এমন ফুলের রাজ্যে যেতে চাইলে আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। ঢাকার কাছেই নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সাবদি গ্রাম। এ গ্রামের আশপাশের সব জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় কাঠমালতি, গাঁদা, ডালিয়াসহ হরেক রকমের ফুলের বাগান। সাবদি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে কেউ পা রাখলেই বিস্মিত হয়ে ওঠেন।গ্রামগুলোকে ঘিরে শুধু বাগান আর বাগান। কয়েক বর্গমাইল এলাকাব্যাপী কাঠমালতি, গাঁদা, ডালিয়া ও জিপসি ফুলের গুচ্ছ গুচ্ছ বাগান। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে গ্রামগুলোর রাস্তার দু’ধারে হাজারও কাঠমালতির সারি সারি বাগান। সারা গ্রামের সব জমিতে ফুল আর ফুল। ফুলের সাম্রাজ্য সাবদি ছাড়াও দেখা মেলে দিঘলদী, সেলশারদী, মাধবপাশা, আইছতলাসহ সোনারগাঁও উপজেলার সম্ভুপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। এসব গ্রামে কাঠমালতি, গাঁদা, বেলী ও জিপসি ফুলের বাগান করে শতাধিক মানুষের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
তাই সাবদী ও দিঘলদী গ্রাম এখন সারাদেশে ফুলের গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদি, দিঘলদী গ্রামের অবস্থান। গ্রামগুলোর পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের পশ্চিম ধারে সারি সারি কাঠমালতির বাগান। ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা শান্ত পরিবেশের গ্রামগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫/৬ হাজার লোক জড়িয়ে আছে ফুলের বাগানের সঙ্গে।
প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ফুল ঢাকা শাহবাগ ও চট্টগ্রামের ফুলের আড়তে যায়। এখানকার ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এমনকি চাষকৃত ফুল কয়েকটি দেশে রফতানিও করা হয়। এতে যেমন কৃষকের লাভ বেড়েছে তেমনি অন্যদিকে বেড়েছে দেশের সুনাম। সরকারও লাভবান হচ্ছে।ফুল চাষে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা ও স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা জড়িত রয়েছে। তারা প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে কাঠমালতির ফুল বাগানে কলি আহরণের উদ্দেশ্যে যায়। সাংসারিক সুখ-দুঃখের আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে ডালা ভরে ফুল কলি তোলে যার যার বাড়িতে ফিরে আসে। কাঠমালতির ফুল দিয়ে ‘গাজরা’ ও ফুল কলির লহর বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাবদি, দিঘলদীসহ ওই এলাকার মহিলারা।
এদিকে ফুলচাষীরা বাগান থেকে তুলে আনা ফুল বাড়ির আঙ্গিনায় মালা গেঁথে সেগুলো সন্ধ্যায় সাবদি বাজারে নিয়ে জড়ো করে। সাবদি বাজার থেকে ট্রাকে করে পাইকাররা প্রতিরাতে এসব ফুল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য। তারা রবিশস্য চাষ করে যা পান তার থেকে আট-দশ গুণ বেশি লাভবান হচ্ছেন ফুল চাষ করে।
এ কারণে অনেকেই বাপ-দাদার আদিম চাষ পরিবর্তন করে ফুল চাষের প্রতি ঝুঁকেছেন। আর এতে লাভও হচ্ছে। এ গ্রামের মানুষ ফুল চাষ করে তাদের পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে দিয়েছে। গ্রামের সবাই এখন স্বাবলম্বী। একটু অবসর পেলেই দৃষ্টি এবং মন জুড়াতে চলে যেতে পারেন সাবদি এবং তার আশপাশের গ্রামগুলোয়। আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অপরূপ সৌন্দর্যের অন্য এক ভুবন।
===================================================